ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হতে কুট কৌশল অবলম্বন করছেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পরপর নির্বাচন হয়ে থাকে । অই বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের পর যে মঙ্গলবার পড়ে – সেদিনই সাধারনত নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী নভম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ।আমাদের বাংলাদেশের মতো করে জনগণের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। ইলেকটোরাল কলেজ নামে পরিচিত এক দল কর্মকর্তার পরোক্ষ ভোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিভিন্ন দেশের কূটীতিকরা ততই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমার আমেরিকান বন্ধুরা বিভিন্ন মতামত জরিপের উল্লেখ করে ট্রাম্পের তুলনায় জো বাইডেনের এগিয়ে থাকার খবর দিচ্ছেন এবং বলছেন, মার্কিন জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যথেষ্ট সক্ষম। কিন্তু একজন ব্রিটিশ নাগরিকের দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো পরিস্থিতি দেখে আমি উদ্বিগ্ন হচ্ছি।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কিনা এতিমধ্য কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত হয়েছে। মার্কিন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কাছে আস্থার জায়গা হারিয়েছেন বহু আগেই। দেশে-বিদেশে তার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জনমনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায়। প্রতিটি সমীক্ষাতেই ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছেন৷ তবে ভোটারদের মতিগতি বুঝতে এমন সমীক্ষা যে নির্ভরযোগ্য নয়, চার বছর আগের নির্বাচনে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ গত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন সবার কাছে আপাতদৃষ্টিতে এগিয়ে থেকে মনে হলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নির্বাচনে হেরে যান ৷
ব্রেক্সিট ভোটের কথা একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে সকলেই স্মরণ করতে পারি।
তখনকর সময়ে গণভোটের আগে প্রায় সব জরিপেই দেখা গিয়েছিল ব্রিটিশরা EU এর সঙ্গে যুকতরাজ্যের থাকাকেই সমর্থন করছে। কিন্তু গণভোটের ফল দেখা গিয়েছিল একেবারে উল্টো।
রাশিয়া,তুরস্ক,পোল্যান্ডে ও হাঙ্গেরি কর্তৃত্ববাদী নেতারা ক্ষমতা নিজের আওতায় রাখার জন্য কীভাবে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে কারসাজির মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলেছেন এবং একের পর এক বিভিন্ন রকমের বধ কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন, এই গুলা বিষয় নিয়ে যেসব পণ্ডিত গবেষণা করছেন, তাঁদের সঙ্গে একটি থিংকট্যাংকের পরিচালক হিসেবে আমার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সেই সুবাদে আমরা অনুমান করে বলতে পারি, ট্রাম্প তার পূর্ব নেতাদের কৌশল অবলম্বন করছেন এবং পরবর্তী নির্বাচনে ট্রাম তাঁদের চেয়েও খারাপ উপায় অবলম্বন করবেন।
ট্রাম্প যে নোংরা পথটি প্রথম বেছে নেবেন, তা হলো সে ইতিহাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। এই নেতারা এইরকম অস্ত্র দিয়ে রক্ষণশীল সমাজে ভেদাভেদ তৈরি করেন এবং এই বিভক্তির মধ্য দিয়ে তাঁরা তাঁদের নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেন বা করার চেষ্টা করেন। নিজের ভোটার শিবিরকে শক্তপোক্ত করার জন্য কিছু ভোটারকে অপমান–অপদস্থ করতেও তাঁরা পিছপা হন না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রায়ই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের কথা স্মরণ করতে দেখা যায়।অতীতের কথা তুর্কির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বারবার বলেন একইভাবে অটোমান সাম্রাজ্যের বিজয়মুখর। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান বহুবার ঐতিহাসিক ট্রিয়ানোন চুক্তির বলছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জজ বরিস জনসন তিনিও আবার প্যাক্স ব্রিটানিকার কথা বলেন। তাঁরা সবাই ইতিহাস টেনে পক্ষপাতমূলক সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে থাকেন।
অন্য আরেকটি নোংরা পন্থা হলো ‘সত্য-উত্তর রাজনীতি’। এ নোংরা পন্থায় এসব নেতা প্রোপাগান্ডা ভিডিও ছড়িয়ে দেয় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তোলেন। বিশেষজ্ঞদের তুলে ধরা কিছু তথ্য–উপাত্তের সত্যতা তাঁরা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দেন। অনেক ক্ষেত্রেই ভোটারদের পক্ষে তাঁদের যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৩য় কৌশল হলো নিজেই নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করা। ১৯৯০–এর দশকে তুরস্কের কিছু সরকারি ব্যবস্থা থেকে ‘ডিপ স্টেট’ কথাটির উদ্ভাবন হয়। এ অবস্থায় সরকারের গোপনীয় থাকা আরেকটি শক্তিকে খোদ সরকারের চেয়ে বেশি বড় করা হচ্ছে। এরদোয়ান,ট্রাম্প, জনসন,ওরবান সহ বেশিরবার নেতারাই সবাই এই রাস্তা বেছে নিয়েছেন। তাঁরা নিজ নিজ বাধ্যগত অনানুষ্ঠানিক গোষ্ঠীকে সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
৪র্থ কৌশলটি হলো বিরুদ্ধ মতের ভোটারদের দমিয়ে রাখা। কুর্দি ভোটারদের ক্ষমতাহীন করে রাখতে এরদোয়ান যেভাবে নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, ঠিক একইভাবে ট্রাম্প আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটার যাতে ভোট দিতে না পারেন, সে জন্য তিনি ই-মেইল ভোটের বিরোধিতা করেছেন।
‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ শীর্ষক কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারভিত্তিক আন্দোলন হচ্ছে, সেটিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। এ আন্দোলনকে শ্বেতাঙ্গবিরোধী হিসেবে তুলে ধরে শ্বেতাঙ্গদের মন বিষিয়ে তুলতে পারলে শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা ট্রাম্পকে ভোট দেওয়াকে পবিত্র কর্তব্য বলে ভাববেন। এই বিষয়টির
কথা মাথা রেখেই তিনি সাদা-কালোর মধ্যে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এর বাইরে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বেলারুশে যেইভাবে লুকাশেঙ্কো ভোট জালিয়াতি করেছেন, ট্রাম্প ও যে এ ধরনের পদ্ধতি বেছে নেবেন না, তা–ও কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না।
এ অবস্থায় ট্রাম্পের যে সব খারাপ চিন্তভাবনা সম্পর্কে ভোটারদের ধারণা দেওয়াই ডেমোক্র্যাট দলের প্রধান কাজ হওয়া উচিত।
Discussion about this post